বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৭ অপরাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
যে জমিগুলো সাধারণত সরাসরি সরকারের মালিকানাধীন থাকে সেগুলোকে আমরা খাস জমি বলে থাকি। অর্থাৎ সরকারের যে জমি কালেক্টরের নামে রেকর্ড তাকে খাস জমি বলে। জেলা প্রশাসক বা ডিসি সাহেব যখন জমি জমার বিষয়ে কাজ করেন তখন তাকে কালেক্টর বলে। অন্যান্য সংস্থার জমিও সরকারের মালিকানায় থাকলেও তাকে খাস জমি বলা যায় না। কারণ জমিগুলো যে সংস্থার মালিকানায় থাকে সেই সংস্থার জমি বলে পরিচিত হয়, যেমন রেলের জমি। মনে রাখবেন খাস জমির কোন ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয় না কিন্তু সংস্থার জমির ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয়।
আপনারা সবাই জানে ১৯৫১ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন জারি করে জমিদারী উচ্ছেদ করা হয়। এই আইনে জমিদারদেরকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ রেখে বাকি জমি সরকারের নিকট সমর্পণ করার আদেশ দেয়া হয়। এইসব জমি কালেক্টরের ১নং খাস খতিয়ানে নেয়া হয় যা খাস জমি হিসেবে পরিচিত। নতুন চর জেগে উঠলে তা খাস জমি হিসেবে বিবেচিত হয়। কোন মালিক একাধারে ৫ বছর জমি অনাবাদি রেখে বাস্তুভিটা ত্যাগ করলে বা তিন বছরের বেশি সময় খাজনা না দিয়ে জমি অনাবাদি রাখলে সহকারী কমিশনার ভূমি নোটিশ দিয়ে শুনানি করে সেই জমি খাস করতে পারেন।
জমি সাবলেট দেয়া নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও যদি সাবলেট দেয়া হয় তবে শুনানি করে বাজেয়াফত করে খাস খতিয়ানে নেয়া যেতে পারে। সিলিং বহির্ভূত সমর্পিত জমি কালেক্টরের খাস খতিয়ানে যোগ হয়। যে কেউ তার জমি সরকার বরাবরে খাস খতিয়ানে সমর্পণ করতে পারেন। খাজনা বকেয়া থাকলে বা কোন ঋণ থাকলে বা জরিমানা হলে বা সম্পত্তি বাজেয়াফত হলে খাস খতিয়ানে নেয়া যায়। সরকার কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন বা অন্য কাজে জমি অধিগ্রহণ করতে পারে যাকে আমরা একোয়ার বলে জানি। একোয়ার করা জমিও খাস খতিয়ানে আসতে পারে। কোন ব্যক্তি ওয়ারেশ ছাড়া মারা গেলে তার জমিও খাস খতিয়ানে আসে।
খাস জমি আবার দুটি শ্রেনীতে ভাগ হয়। ১. কৃষি খাস জমি ২. অকৃষি খাস জমি এবার আসি এ খাস জমি কারা বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকারী। কৃষি খাস জমি সাধারণত ভূমিহীনরা বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকারী। সে জন্য জেনে নেয়া দরকার কারা ভূমিহীন হিসেবে গণ্য হবে। খাস জমি বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী সেই সব পরিবার ভূমিহীন বলে গণ্য হবে যেসব পরিবারের (ক) বসতবাড়ী ও কৃষি জমি কিছুই নাই, কিন্তু পরিবারটি কৃষি নির্ভর (খ) ১০ শতাংশ পর্যন্ত বসতবাড়ী আছে কিন্তু কৃষিযোগ্য জমি নেই, এইরূপ কৃষি নির্ভর পরিবারও ভূমিহীন হিসেবে গণ্য হবে। তবে সরকার ভূমিহীনদের জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার একটি অগ্রাধিকারের ক্রম তৈরি করে দিয়েছে। সবার আগে (১) দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, এরপর (২) নদীভাঙা পরিবার, তারপর (৩) সক্ষম পুত্রসহ বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা পরিবার, তারপর (৪) কৃষি জমিহীন ও বাস্তুভিটাহীন পরিবার, তারপর (৫) অধিগ্রহণের ফলে ভূমিহীন পরিবার, সবশেষে (৬) যে পরিবারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত বসতবাড়ী আছে, কৃষি জমি নেই কিন্তু কৃষি নির্ভর। সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক সম্পাদিত কবুলিয়ত গ্রহণ করবেন এবং নির্বাচিত জমি বন্দোবস্ত দেবেন। তিনি কবুলিয়ত ফরমের নির্ধারিত স্থানে স্বাক্ষর দান করবেন। বন্দোবস্ত দেওয়া জমি কোনক্রমেই বিক্রয় বা হস্তান্তর করা যাবে না তবে উত্তরাধিকারীদের নাম পরিবরর্তন করা যাবে। এই বন্দোবস্তের মেয়াদ হবে ৯৯ বছর। জেলা প্রশাসক কর্তৃক কবুলিয়ত গ্রহণের পরে সংশ্লিষ্ট রেজিষ্ট্রি অফিসে উহা রেজিষ্ট্রি করতে হবে। এই কবুলিয়ত রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোন রেজিষ্ট্রেশন ফিস এর প্রয়েজন হবে না।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮